ডায়াবেটিস জনিত
কিডনি রোগ

 রক্তের অতিরিক্ত চিনি যদি আসল কারণ না হয়...

ডায়বেটিস এর সাথে কি সম্পর্ক

 ২য় ধরনের ডায়বেটিস রোগীদেরই ক্রমাবনতিশীল কিডনি রোগ হতে দেখা যায় বেশি মাত্রায়। ধীরে ধীরে এই অসুখ খারাপ হতে থাকে এবং এক সময় কিডনি বিকল হয়ে যায়। তখন ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় অথবা অন্য কারো দেহ থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হয়। 

সাধারণভাবে এর কারণ হিসাবে ডায়বেটিস জনিত কারণে রক্তে অতিরিক্ত চিনি (গ্লুকোজ) এর উপস্থিতি কে দায়ী করা হয়। এবং অনেকের ক্ষেত্রে সেটা সত্য যদি তারা তাদের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে যে সকল ডায়বেটিক রোগীগণ অনেক পরিশ্রম এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় রাখেন, তাদের কিডনিও ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। 

বাড়তি চিনিই যদি ডায়বেটিক রোগীদের কিডনি রোগ হবার একমাত্র কারণ হত, তাহলে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখলে কেন কিডনি অসুখ হয়? এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রফেসর ডঃ রবার্ট লাস্টিগ। ইঁদুরের উপর করা গবেষণার উদ্রিতি দিয়ে তিনি জানালেন যে, এই গবেষণার জন্যে বিশেষ এক ধরনের ইঁদুর উৎপাদন করা হয়েছিল, যাদের রক্তের চিনির মাত্রা কিছুতেই অস্বাভাবিক পর্যায় থেকে বাড়ে না। এই ইঁদুর গুলোকে যাই খাওয়ানো হোক, তাদের রক্তের চিনি থাকে স্বাভাবিক। কিন্তু এই ইঁদুরগুলোর শতভাগ মারা যায় কিডনি বিকল হয়ে। 

এই পর্যবেক্ষণ থেকে গবেষকগণ খুব ভাবনায় পড়ে গেলেন যে, চিনি স্বাভাবিক থাকলে, কিডনি কেন নষ্ট  হল। তখন এই ইঁদুরগুলোর রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ল যে, তাদের রক্তে ইন্সুলিন হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রা থেকে সব সময় অনেক বেশি থাকে। এ থেকে তারা বুঝতে পারলেন যে দীর্ঘদিন দেহে ইন্সুলিন এর মাত্রা বেড়ে থাকলে, তা কিডনির ক্ষতি করে।

ভাবছেন, ইনসুলিনের আধিক্যে যদি কিডনির ক্ষতি হয়, তাহলে ২য় ধরনের ডায়বেটিস রোগী যাদের দেহে ইনসুলিনের অভাব থাকে, তাহলে তাদের কিডনি কেন খারাপ হবে? দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে আপনাকে ২য় ধরনের ডায়বেটিস সম্পর্কে ভুল তথ্য শেখানো হয়েছে। ২য় ধরনের ডায়বেটিস আসলে অতিরিক্ত ইন্সুলিন ঘটিত অসুখ। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ২য় ধরনের ডায়বেটিস রোগ নিয়ে আমাদের রচনাটি পড়তে এই লিংকটি ক্লিক করুন। 

২য় ধরনের ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের দেহে 'সাধারণত' স্বাভাবিক মাত্রা থেকে ৭ গুন পর্যন্ত বেশি ইন্সুলিন নিঃসরণ হয় যদিও এই পর্বত পরিমাণ ইন্সুলিনও রক্ত থেকে চিনি সরিয়ে দেবার কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না। ফলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে থাকে। ইঞ্জেকশন আকারে বাইরে থেকে আরো ইন্সুলিন দিলে, তাৎক্ষনিকভাবে রক্তের চিনি কমে বটে, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ইনসুলিনের প্রভাবে দেহের অঙ্গগুলো ভেঙ্গে পড়তে থাকে। প্রফেসর ডঃ বেন বিকম্যানও এই কথাই বলেন। 

দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত ইন্সুলিন থাকলে কিডনির ক্ষতি হয়, কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। অতিরিক্ত ইন্সুলিন রক্তনালীর ভেতরের দিকের যে এন্ডোথেলিয়াল কোষ থাকে, তাদের উপরও চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রক্তনালী তার স্বাভাবিক প্রসারণশীলতা হারায়। কিডনির ভেতরে যে অতি সূক্ষ্ম রক্তনালি গুলো রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় ক্যাপিলারি, তারা এই অবস্থায় পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিডনির কর্মক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

ইউকে এর ডাক্তার ডাঃ ডেভিড আনউইন, এই তথ্যের ভিত্তিতে, তার ডায়বেটিক কিডনি রোগীদের খাবার থেকে শর্করা বাদ দিয়ে (যেন তাদের রক্তে চিনি বাড়তে না পারে এবং দেহে ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসতে পারে) বেশি করে প্রাণীজ আমিষ এবং প্রাণীজ চর্বি খাইয়ে কিডনি অসুখকে ভালর দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন।